IELTS - এ ভালো স্কোর পেতে যা জানা জরুরী
পড়াশোনার বা চাকরীর জন্য দেশের বাইরে যেতে চাইছেন?! সবাই আপনাকে IELTS করতে বলছে, কিন্তু IELTS সম্পর্কে ধারণা খুব কম?! তাহলে চলুন, জেনে নেয়া যাক IELTS কী? কেন IELTS করতে হয়? কিভাবে আপনি IELTS এর জন্য প্রিপারেশন নিবেন!
IELTS ( the International English Language Testing System) মূলত ইংরেজি ভাষার উপর আপনার দক্ষতা যাচাইয়ের একটি জনপ্রিয় পরীক্ষা।যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা,অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ,আয়ারল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যাদের প্রথম ভাষা হলো ইংরেজি সেসকল দেশে পড়াশোনা ,চাকরী, মাইগ্রেশনের জন্য প্রয়োজন IELTS এ অংশগ্রহণ করা।
এই পরীক্ষার আউটলাইন তৈরি করেছে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে থাকা কিছু বিশেষজ্ঞরা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয়। যে চারটি বিভাগে আপনাকে মূল্যায়ন করা হয় তা হলো -রিডিং (Reading), রাইটিং(Writing), লিসেনিং(listening) এবং স্পিকিং(Speaking) ।
৩টি প্রতিষ্ঠান মিলে এই IELTS পরীক্ষাটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে -ক্যাম্ব্রিজ এসেস্মেন্ট ইংলিশ, ব্রিটিশ কাউন্সিল,আইডিপি IELTS অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশে দুটি প্রতিষ্ঠান IELTS পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যার একটি হলো ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং অন্যটি আইডিপি IELTS অস্ট্রেলিয়া।
IELTS এর উদ্দেশ্য
আপনি যদি এমন দেশের নাগরিক হোন যে দেশের প্রথম ভাষা ইংরেজি নয় যেমন বাংলাদেশ,ভারত,লেপাল ইত্যাদি এবং আপনি যদি এমন কোন দেশে পড়াশোনা,চাকরি বা মাইগ্রেশনের কারণে যেতে চান যে দেশের প্রথম ভাষা ইংরেজি তবে সেসব দেশে যেতে হলে আপনাকে IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ আপনি যদি ইংরেজি ভাষায় দক্ষ না হোন তবে ঐসকল দেশে যেয়ে আপনার অন্যদের কথা শুনে বুঝতে অসুবিধা হবে, অন্যদের নিজের কথা বুঝাতে সমস্যার মুখোমুখি হবেন,সেখানে যেমন কিছু পড়ে বুঝতে আপনার অসুবিধা হবে তেমনি কিছু লিখে বুঝাতেও অসুবিধায় পড়বেন। তাই আপনাকে রিডিং,রাইটিং,লিসেনিং,স্পিকিং এ চারটি বিভাগে দক্ষতা অর্জন করানো এর মূল উদ্দেশ্য।
একাডেমিক IELTS বনাম জেনারেল ট্রেনিং IELTS
আপনি যদি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ছাত্র হিসাবে বিদেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়তে চান বা কোনও পেশাদার প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে বা প্রবেশ করতে চান তবে IELTS একাডেমিক পরীক্ষায় আপনাকে অংশগ্রহণ করতে হবে।অপরদিকে চাকরির জন্য মাইগ্রেশনের উদ্দেশ্যে যদি আপনার থাকে তবে আপনাকে IELTS জেনারেল ট্রেনিং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। তবে IELTS এর রাইটিং এবং রিডিং টেস্ট একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে ভিন্ন। একাডেমিক IELTS এ বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত টপিকের উপর পরীক্ষা নেয়া হয়। অন্যদিকে সাধারণ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোন টপিক এ পরীক্ষা নেয়া হয় জেনারেল IELTS এ।
IELTS টেস্ট মডিউল
IELTS পরীক্ষায় ৪টি বিভাগে আপনার দক্ষতা যাচাই করা হয়। এ চারটি বিভাগ হলো রিডিং ,রাইটিং,লিসেনিং এবং স্পিকিং। প্রতিটি বিভাগে আলাদা আলাদা পরীক্ষা হবে এবং প্রতি বিভাগের প্রাপ্ত নাম্বারকে band score এ রূপান্তর করা হয় যা 0-9 এর মধ্যে হিসাব হয়। পরবর্তীতে প্রতি বিভাগের band score যোগ করে গড় করা হয়। ধরুন আপনি লিসেনিং এ band score পেলেন ৮,রিডিং ৭.৫, রাইটিং ৭, স্পিকিং ৭.৫ পেয়েছেন তাহলে আপনার গড় band score হবে ৭.৫। আর এই গড় নাম্বার দেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আপনার ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা মূল্যায়ন করবে। আসুন জেনে নেয়া যাক IELTS এই ৪ টি মডিউল সম্পর্কে।
লিসেনিং (listening):
একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিং দুই ক্যাটাগরীতে লিসেনিং পরীক্ষাটি একইরকম হয়। এই মডিউলের পরীক্ষায় আপনাকে নেটিভ ইংলিশ স্পিকারদের দেয়া চারটি রেকর্ডিং শুনতে দেয়া হবে এবং তারপর এই রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে একাধিক প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। রেকর্ড শোনার জন্য আপনাকে ৩০ মিনিট সময় দেয়া হবে। আর উত্তরপত্রে উত্তর লিখতে দেয়া হবে আরো ১০ মিনিট। ৪টি রেকর্ডিং থেকে ১০ টি করে মোট ৪০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রশ্নগুলো রেকর্ডের অনুক্রমে সাজানো থাকবে।প্রতি প্রশ্নের জন্য ১ করে মার্ক থাকবে। টোটাল ৪০ মার্ক যা পরবর্তীতে লিসেনিং band score এ রূপান্তর করা হবে।
রিডিং(reading):
এই মডিউলের পরীক্ষা একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং এ পৃথক হয়। একাডেমিক ও জেনারেল উভয় পরীক্ষা ৬০ মিনিটের হয় এবং তার মার্কস থাকে ৪০।
একাডেমিক এ ৩টি প্যাসেজ দেয়া থাকে যা বিভিন্ন বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং সংবাদপত্র থেকে নেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিটি প্যাসেজ এ শব্দ থাকে সর্বনিম্ন ৮০০ এবং সর্বোচ্চ ১৫০০। এই প্যাসেজগুলো থেকে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রতিটির মার্ক্স ১ করে হবে। যেহুতু একাডেমিক পরীক্ষাটি তুলনামূল্ক কঠিন হয় তাই ৪০ এ ২৩ পেলে band score ৬ ধরা হয়।
অপরদিকে GT ( General training) এ সেকশন থাকে যার প্রথম দুটি তুলনামূলক সহজ থাকে । সেকশন-১ থেকে প্রশ্ন হয় ১-১৪ নম্বর প্রশ্ন হয়, সেকশন-২ থেকে প্রশ্ন হয় ১৫-২৭ নম্বর প্রশ্ন। সেকশন-৩ তুলনামূলক কঠিন হয় সেকশন ১ এবং ২ থেকে। এই সেকশন-৩ অনেকটা একাডেমিকের মতো প্রশ্ন হয়। সেকশন-৩ থেকে ২৮-৪০ নম্বর প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মার্ক্স ১ করে হবে। যেহুতু একাডেমিক এর তুলনায় GT টেস্ট সহজ হয় তাই ৪০ এ ৩০ পেলে band score ৬ ধরা হয়।
রাইটিং ( writing)
এই মডিউলের পরীক্ষাও একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং এ পৃথক হয়। দুটো ক্যাটাগরীতেই ৬০ মিনিটের পরীক্ষা হবে।দুটো ক্যাটাগরীতে ২টি করে টাস্ক থাকবে। টাস্ক-১ ও টাস্ক-২। একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং এ টাস্ক-২ এ ২৫০ শব্দের রচনা লিখতে হয় ৪০ মিনিটে।
টাস্ক-১ এই মূলত দুইটি ক্যাটাগরীতে পার্থক্য থাকে । GT তে টাস্ক-১ এ চিঠি লিখতে হয় ১৫০ শব্দের ২০ মিনিটে। চিঠি হতে পারে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক। আর একাডেমিক এ চার্ট বা গ্রাফ বিশ্লেষণ করতে দেয়া হয় যেমন লাইন গ্রাফ,বার গ্রাফ,পাই চার্ট,টেবিল চার্ট,ডায়াগ্রাম।পরীক্ষায় দেয়া চার্ট বা গ্রাফটি ২০ মিনিটে ১৫০ শব্দের মধ্যে বিশ্লেষণ করতে হবে।
স্পিকিং (speaking):
একাডেমি এবং GT উভয় ক্যাটাগরীতে স্পিকিং পরীক্ষার নিয়ম এক থাকে। ১১-১৪ মিনিতের মধ্যে ৩ টি ভাগে পরীক্ষা নেয়া হয়।পরীক্ষক সরাসরি আপনার সাথে কথা বলবে এবং আপনার ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা যাচাই করবে। প্রতিটি মৌখিক পরীক্ষা রেকর্ডেড থাকবে।
পার্ট-১ এ পরীক্ষক আপনার সম্পর্কে এবং আপনার পরিচিত বিষয়ের উপর জিজ্ঞাসা করবে। আর এর সময়কাল হবে ৪-৫ মিনিট। পার্ট-২ এ আপনাকে দুটি কার্ড দেয়া হবে।যেকোনো একটি কার্ডে দেয়া বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনাকে ২ মিনিট কথা বলতে হবে।আর এই কথা বলার জন্য আপনাকে ১ মিনিট সময় প্রস্তুতি নিতে দেয়া হবে। পার্ট-৩ এ আপনাকে পার্ট-২ নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে প্রশ্ন করা হবে।পার্ট-৩ এর সময়সীমা থাকবে ৪-৫ মিনিট।
এই চারটি মডিউলের পরীক্ষা একই দিনে হবে বিরতি ছাড়া।পরীক্ষার প্রাপ্ত band score কে গড় করে আপনার যে নম্বর আসবে তাই আপনার IELTS এর মূল স্কোর।
কোথায় এবং কিভাবে পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যাবে?
IDP অথবা ব্রিটিশ কাউন্সিল যেকোনো একটির অধীনে আপনি IELTS পরীক্ষা দিতে পারেন। ঢাকায় ধানমন্ডি, উত্তরা সহ মোট ৫টি জায়গায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের টেস্ট সেন্টার আছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং রাজশাহীতেও ব্রিটিশ কাউন্সিলের টেস্ট সেন্টার আছে। অনলাইন এবং টেস্ট সেন্টারে গিয়ে দু’ভাবেই পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যায়। তাদের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
কিভাবে পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিবেন?
পড়াশোনা বা মাইগ্রেশন যে কারণেই আপনি বাইরে যেতে চান না কেন আপনাকে IELTS পরীক্ষা দিতে হবে। আর এই পরীক্ষার জন্য আপনার প্রয়োজন ধৈর্য্য ও অধ্যাবসায়। আর প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন যা আপনাকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর এই কাঙ্ক্ষিত গাইডলাইন পেয়ে যাবেন আমাদের “শিক্ষা” প্ল্যাটফর্মের IELTS কোর্সটিতে। কোর্সটি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংক এ-
https://shikkha.xyz/home/course/ielts-7-plus-mastering-ielts-preparations/52
Comments